পানি দূষণ কাকে বলে? পানি দূষণের কারণ ও প্রভাব
পানি দূষণ কাকে বলে?
পানি দূষণ বলতে বোঝায় জলাশয় (যেমন নদী, হ্রদ, সমুদ্র, ভূগর্ভস্থ জল) মানুষের কার্যকলাপের ফলে দূষিত হওয়া।
দূষণকারী পদার্থ জলাশয়ে মিশে গেলে পানির প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং পানি ব্যবহারের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
পানি দূষণের ৫টি প্রধান কারণ
১. শিল্পকারখানার বর্জ্য
বিভিন্ন শিল্পকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত রাসায়নিক, তেল, ধাতু, ওষুধ, ইত্যাদি পানিতে মিশে দূষণ সৃষ্টি করে।
২. কৃষিক্ষেত্র থেকে নির্গত রাসায়নিক
সার, কীটনাশক, ইত্যাদি ব্যবহার করে কৃষিকাজের ফলে রাসায়নিক পদার্থ পানিতে মিশে দূষণ সৃষ্টি করে।
৩. ব্যক্তিগত ও গৃহস্থালীর বর্জ্য
- মানুষের মলমূত্র: নোংরা পানি ব্যবস্থাপনার ফলে মানুষের মলমূত্র পানিতে মিশে দূষণ সৃষ্টি করে।
- ঘরোয়া আবর্জনা: রান্নার তেল, প্লাস্টিক, ইত্যাদি ঘরোয়া আবর্জনা ফেলে দিলে পানি দূষিত হয়।
৪. জাহাজ থেকে নির্গত তেল
জাহাজ থেকে তেল লিক হলে বা জাহাজ দুর্ঘটনায় তেল পানিতে মিশে দূষণ সৃষ্টি করে।
৫. অ্যাসিড বৃষ্টি
বায়ুমণ্ডলে দূষণকারী পদার্থের সাথে বৃষ্টির পানি মিশে অ্যাসিড বৃষ্টি হয়। এই অ্যাসিড বৃষ্টি জলাশয়ে পড়ে পানির pH মান পরিবর্তন করে এবং পানি দূষিত করে।
পানি দূষণের প্রভাব
পানি দূষণের ৫টি ক্ষতিকর প্রভাব: পানি দূষণ আমাদের পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।
এর ৫টি ক্ষতিকর প্রভাব নীচে তুলে ধরা হলো:
১. মানুষের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব:
- জলবাহিত রোগ বৃদ্ধি: পানি দূষণের ফলে কলেরা, টাইফয়েড, ডায়রিয়া, ইত্যাদি রোগের জীবাণু পানিতে মিশে যায়।
- দীর্ঘমেয়াদী রোগের ঝুঁকি: দূষিত পানি পানের ফলে ক্যান্সার, কিডনি রোগ, শ্বাসকষ্ট, ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
- শিশুমৃত্যু হার বৃদ্ধি: বিশেষ করে শিশুরা দূষিত পানির প্রভাবে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
২. জলজ প্রাণীর উপর প্রভাব:
- জলজ প্রাণীর মৃত্যু: দূষিত পানিতে মাছ, ছিপছিপে, জলজ উদ্ভিদ, ইত্যাদি প্রাণী টিকে থাকতে পারে না এবং মারা যায়।
- জলজ খাদ্য শৃঙ্খল ভেঙে পড়া: জলজ প্রাণীর মৃত্যুর ফলে খাদ্য শৃঙ্খল ভেঙে পড়ে এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায়।
৩. পরিবেশের উপর প্রভাব:
- জলজ জীববৈচিত্র্য হ্রাস: দূষিত পানির কারণে জলজ প্রাণীর সংখ্যা কমে যায় এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায়।
- জলাশয়ের সৌন্দর্য নষ্ট: দূষিত পানির কারণে জলাশয়ের সৌন্দর্য নষ্ট হয় এবং পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা: পানি দূষণ জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।
৪. অর্থনৈতিক ক্ষতি:
- মাছ ধরার পরিমাণ হ্রাস: দূষিত পানির কারণে মাছ ধরার পরিমাণ হ্রাস পায় এবং মৎস্যজীবীদের আয় কমে যায়।
- পানি শোধনের খরচ বৃদ্ধি: দূষিত পানি ব্যবহারের জন্য শোধনের খরচ বৃদ্ধি পায়।
- পর্যটন শিল্পে ক্ষতি: দূষিত জলাশয়ে পর্যটক আকর্ষণ কমে যায় এবং পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৫. খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি:
- দূষিত মাছ: দূষিত পানিতে মাছ বেড়ে ওঠে এবং সেই মাছ খাওয়ার ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি দেখা দেয়।
- সেচের জন্য দূষিত পানি ব্যবহার: দূষিত পানি ব্যবহার করে ফসল সেচ করলে ফসল দূষিত হয় এবং খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি দেখা দেয়।
পানি দূষণ রোধের উপায়
- শিল্পকারখানার বর্জ্য পরিশোধন: কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য পরিশোধন করে পানিতে মিশতে না দেওয়া।
- কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক ব্যবহার কমানো: জৈব সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে রাসায়নিকের ব্যবহার কমানো।
- নোংরা পানি ব্যবস্থাপনার উন্নতি: নোংরা পানি পানিতে মিশতে না দেওয়ার জন্য উন্নত নোংরা পানি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
- সচেতনতা বৃদ্ধি: মানুষকে পানি দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করে তোলা এবং পরিবেশ রক্ষায় উৎসাহিত করা।
পানি আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য। পানি দূষণ রোধ করে আমাদের পরিবেশ এবং আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব।