স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
সারা গায়ে চুলকানি? দেখে নিন চুলকানি দূর করার ঔষধের নাম
চুলকানি দূর করতে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে। চুলকানির কারণ ভিন্ন হতে পারে, যেমন- অ্যালার্জি, ছত্রাক সংক্রমণ, ত্বকের সংক্রমণ, বা ড্রাই স্কিন।
চুলকানি দূর করার ঔষধের নাম
বিভিন্ন সমস্যার জন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষধ কার্যকর। এখানে কিছু সাধারণ চুলকানি দূর করার ঔষধের নাম এবং তাদের ব্যবহারের বিস্তারিত দেয়া হলো:
১. এন্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট
- উদাহরণ: সিট্রিজিন (Cetirizine), লোরাটাডিন (Loratadine)
- ব্যবহার: অ্যালার্জি বা এলার্জিজনিত চুলকানির জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ঔষধগুলি ব্যবহার করা হয়। এটি চুলকানি ও ফোলা কমাতে সহায়ক।
২. ক্যালামাইন লোশন
- ব্যবহার: ত্বকের জ্বালা বা চুলকানি কমাতে এটি সরাসরি ত্বকে লাগানো হয়। এটি সাধারণত ত্বকের জ্বালা ও চুলকানি কমাতে দ্রুত কাজ করে।
৩. স্টেরয়েড ক্রিম বা মলম
- উদাহরণ: হাইড্রোকরটিসন (Hydrocortisone) ক্রিম
- ব্যবহার: যদি চুলকানি খুবই বেশি হয় এবং এলার্জি বা প্রদাহের জন্য হয় তবে ডাক্তাররা সাধারণত স্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার করতে পরামর্শ দেন। দীর্ঘ সময়ের জন্য এটি ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
৪. এন্টিফাঙ্গাল ক্রিম
- উদাহরণ: ক্লোট্রিমাজল (Clotrimazole), মাইকোনাজল (Miconazole)
- ব্যবহার: ফাঙ্গাল সংক্রমণের কারণে চুলকানি হলে এই ধরনের এন্টিফাঙ্গাল ক্রিম ব্যবহার করা হয়।
৫. এন্টিসেপটিক ক্রিম বা মলম
- উদাহরণ: সলফার বেসড মলম, বেটাডিন (Betadine)
- ব্যবহার: ত্বকে ক্ষত থাকলে বা ইনফেকশনের জন্য চুলকানি হলে এন্টিসেপটিক মলম কার্যকর।
৬. ওটমিল বা কোলয়েডাল বাথ
- ব্যবহার: ত্বক শুষ্ক হলে ওটমিল বাথ চুলকানি কমাতে সহায়ক হতে পারে। এটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৭. অ্যান্টিপ্রুরিটিক ক্রিম (Anti-Pruritic Cream)
- উদাহরণ: প্রমক্সিন (Pramoxine), ডাইফেনহাইড্রামিন (Diphenhydramine) ক্রিম
- ব্যবহার: অ্যান্টিপ্রুরিটিক ক্রিম সরাসরি ত্বকে প্রয়োগ করে চুলকানি কমানো যায়। এটি চুলকানির স্থানে অনুভূতিটা সাময়িকভাবে অসাড় করে দেয়, ফলে চুলকানি কম অনুভূত হয়।
৮. মেনথলযুক্ত মলম
- উদাহরণ: স্যারফিন, স্যারফিনের মতো মলম
- ব্যবহার: মেনথলযুক্ত মলম বা ক্রিম ব্যবহার করলে ত্বকে শীতল অনুভূতি হয় যা চুলকানি কমাতে সাহায্য করে। তবে, দীর্ঘসময় ধরে মেনথলযুক্ত মলম না লাগানো ভালো, কারণ এতে ত্বক শুষ্ক হতে পারে।
৯. ময়েশ্চারাইজার বা ময়েশ্চারাইজিং লোশন
- উদাহরণ: সেরামাইড বেসড ময়েশ্চারাইজার, শিয়া বাটার লোশন
- ব্যবহার: শুষ্ক ত্বকজনিত চুলকানির জন্য নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং চুলকানি কমায়।
১০. অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান বা ক্লিনজার
- উদাহরণ: ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী সাবান, যেমন বেঞ্জয়ল পারক্সাইড (Benzoyl Peroxide) যুক্ত সাবান
- ব্যবহার: যদি চুলকানি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে, তাহলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান বা ক্লিনজার ব্যবহার করতে পারেন। এটি সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে।
চুলকানি দূর করার জন্য আরও কিছু ওষুধ ও প্রাকৃতিক সমাধান আছে যা কার্যকর হতে পারে। চুলকানির ধরন ও কারণ অনুসারে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। নিচে আরও কিছু চুলকানি দূর করার উপায় ও ওষুধের নাম দেয়া হলো:
১১. চুলকানি দূর করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম বা ওষুধ
- উদাহরণ: নিওমাইসিন (Neomycin), বেসিট্রাসিন (Bacitracin)
- ব্যবহার: যদি ত্বকের সংক্রমণজনিত চুলকানি হয়, তবে ডাক্তার সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম বা ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।
১২. হাইড্রোকলয়েড ড্রেসিং (Hydrocolloid Dressing)
- ব্যবহার: এটি ত্বকের যেকোনো খোলা ক্ষত বা চুলকানির কারণে তৈরী হওয়া ক্ষতে লাগানো হয়, যা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং ত্বককে দ্রুত সেরে উঠতে সহায়তা করে।
১৩. সালিসাইলিক অ্যাসিড ক্রিম বা জেল
- উদাহরণ: সালিসাইলিক অ্যাসিড ক্রিম বা জেল, সাধারণত ২% বা ৫% কনসেন্ট্রেশন
- ব্যবহার: চুলকানি এবং ত্বকের শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করে। ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে, মৃত কোষ সরিয়ে ত্বককে মসৃণ করে।
১৪. এমোলিয়েন্ট (Emollients)
- উদাহরণ: পেট্রোলিয়াম জেলি, কোল্ড ক্রিম
- ব্যবহার: এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং শুষ্ক ত্বকের কারণে সৃষ্ট চুলকানি কমাতে কার্যকর।
১৫. কোলয়েডাল ওটমিল বাথ (Colloidal Oatmeal Bath)
- ব্যবহার: কোলয়েডাল ওটমিল বা ওটমিল পাউডার পানিতে মিশিয়ে গোসল করলে ত্বকের চুলকানি কমে। এটি ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
১৬. কেমোমাইল (Chamomile) লোশন বা তেল
- ব্যবহার: কেমোমাইল ত্বকে প্রাকৃতিক আরাম এনে দেয় এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক। চুলকানি কমানোর জন্য ক্যামোমাইল লোশন বা তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
১৭.ক্যাপসাইসিন ক্রিম
- ব্যবহার: ক্যাপসাইসিন চুলকানি কমাতে খুবই কার্যকর, বিশেষ করে দীর্ঘস্থায়ী চুলকানির ক্ষেত্রে। তবে এটি প্রয়োগের পর ত্বকে সামান্য জ্বালা অনুভূত হতে পারে।
১৮. অ্যালোইন ক্রিম
- ব্যবহার: অ্যালোইন সাধারণত বিভিন্ন উদ্ভিদের থেকে তৈরি হয় এবং এটি ত্বকের প্রদাহ কমাতে সহায়ক। বিশেষ করে সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের জন্য এটি কার্যকর।
এই সব ওষুধ ও ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহারের আগে ত্বকের অবস্থান অনুযায়ী সঠিক পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
চুলকানি দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায়
১. এলোভেরা জেল
- ব্যবহার: এলোভেরা জেল ত্বকের জ্বালা ও চুলকানি কমাতে খুবই কার্যকর। এটি ত্বকে ঠান্ডাভাব এনে দেয় এবং ত্বকের প্রদাহ দূর করে।
২. সিডার ভিনেগার (Apple Cider Vinegar)
- ব্যবহার: এক কাপ পানির সাথে কিছুটা সিডার ভিনেগার মিশিয়ে চুলকানির স্থানে লাগানো যায়। এটি ত্বকের পিএইচ ব্যালান্স বজায় রাখে এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ কমায়।
৩. ম্যাগনেশিয়া মিল্ক (Milk of Magnesia)
- ব্যবহার: ম্যাগনেশিয়া মিল্কের মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকে যা ত্বকের চুলকানি কমাতে সহায়ক। এটি সরাসরি চুলকানির স্থানে লাগানো যায়।
৪. বেকিং সোডা পেস্ট
- ব্যবহার: বেকিং সোডা সামান্য পানির সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে চুলকানির স্থানে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এটি ত্বকের জ্বালা প্রশমিত করতে সহায়ক।
৫. লেবুর রস (Lemon Juice)
- ব্যবহার: লেবুর রসে অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ আছে। চুলকানির স্থানে সামান্য লেবুর রস লাগালে চুলকানি কমে। তবে এটি শুধুমাত্র যদি ক্ষত না থাকে তখনই ব্যবহার করা ভালো।
৬. ঠান্ডা কম্প্রেস বা বরফ সেঁক
- ব্যবহার: চুলকানি খুব বেশি হলে আক্রান্ত স্থানে ঠান্ডা পানি বা বরফের কম্প্রেস ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি চুলকানি কমাতে এবং ত্বকের প্রদাহ প্রশমিত করতে সাহায্য করে।
৭. বেসিল বা তুলসী পাতা (Basil)
- ব্যবহার: বেসিল পাতায় রয়েছে ইউজেনল (Eugenol) নামক একটি উপাদান যা প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক। তুলসী পাতা থেঁতো করে এর রস চুলকানির স্থানে লাগানো যায়।
৮. টি-ট্রি অয়েল (Tea Tree Oil)
- ব্যবহার: টি-ট্রি অয়েল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিসেপটিক গুণসম্পন্ন। চুলকানির স্থানে সরাসরি প্রয়োগ না করে এটি ক্যারিয়ার অয়েলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে কার্যকর হয়।
এই সব ওষুধ ও ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহারের আগে ত্বকের অবস্থান অনুযায়ী সঠিক পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।